,

দুটি স্কুলের ভবন নির্মাণকাজ ফেলে পালালেন ঠিকাদার

জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর: কালিয়াকৈর উপজেলায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্মিত দুটি ভবনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে নির্মাণকাজ করার অভিযোগ উঠেছে।

ফলে স্কুল কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে পালিয়েছে। কয়েক মাস ধরে ওই দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

উপজেলার নয়ানগর এলাকার ৫২নং নয়ানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। গত এপ্রিল মাসে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে চারতলা ফাউন্ডেশনবিশিষ্ট ওই স্কুলের নতুন একটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে ওই ভবন নির্মাণকাজ করছে মেসার্স মজিবুর ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজের শুরুর দিকে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও অনিয়মের অভিযোগে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী। পরে এলাকাবাসী ও স্কুল কমিটির কাছে সঠিকভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পুনরায় কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

শিডিউল বহির্ভূতভাবে ভবনের ছাদ ছোট, দরজা-জানালার শিটসহ নিম্নমানের কাজ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ব্যাপক অনিয়মের চিত্র জানাজানি হলে পিলারের ওপর সিমেন্টের খুঁটি ফেলে ছাদটি বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। ছাদ বৃদ্ধি করা ওই সিমেন্টের খুঁটি যে কোনো সময় খুলে বা ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটতে পারে শিশু শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রাণহানির মতো ঘটনাও। এমন আশঙ্কায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী ওই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনও রয়েছে লাপাত্তা। কয়েক মাস ধরে ওই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপসহকারী কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেনকে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে অনিয়মের অভিযোগে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলে টনক নড়ে প্রশাসনের। তবে অনিয়মের অভিযোগে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত আসবে বলে জানিয়েছে উপজেলা এলজিইডি অফিস।

অভিযুক্ত মেসার্স মজিবুর ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ওই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি সাইজুদ্দিন জানান, শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা অনিয়ম করে আসছে। তাদের অনিয়ম হাতেনাতে ধরা পড়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সবার নিরাপত্তার স্বার্থে ও শিডিউল অনুযায়ী ভবন নির্মাণের দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অনিয়মের বিষয়টি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় তুলে ধরা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, নানা অনিয়মের অভিযোগে দুই মাস ধরে স্কুলের ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হচ্ছে ছাদ মাপে কম দিয়েছিল। জানাজানি হলে সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে ছাদ বাড়ানো হচ্ছিল। আবার কবে ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে, তা বলতে পারছি না।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী ও তদারকি কর্মকর্তা মো. সেলিম হোসেন জানান, মিস্ত্রিদের কারণে স্কুলভবন নির্মাণে কিছু ত্রুটি হয়েছে। সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করলে কিছু লোক নানা অজুহাতে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। এতে প্রায় দুই মাস ধরে ওই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

কালিয়াকৈর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী বিপ্লব পাল জানান, ওই স্কুলের ভবনের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তে আসার কথা রয়েছে। অন্যদিকে উপজেলার শাকাশ্বর গ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা নির্মিত ভবনটির বেজ ঢালাই করেই পালিয়েছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে স্কুল কমিটির সদস্যরা ব্যাপক অনিয়ম আর নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে কাজ করার প্রতিবাদ করায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে রেখে পালিয়েছে।

তবে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পিআরও) আহমেদ রেজা আল মামুন জানান, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর